-->

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? কিভাবে শুরু করবেন?

বর্তমান সময়ে চাকরির জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং একটি উল্লেখযোগ্য, দ্রুত প্রসারমান, চ্যালেঞ্জিং এবং জনপ্রিয় একটি ক্ষেত্র। যারা আনন্দ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন, তারা ইচ্ছে করলে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। কারণ, এই ক্যারিয়ার আপনাকে একদিকে যেমন প্রযুক্তিপ্রেমী করে তুলবে, অন্যদিকে আপনার জীবনকে করে তুলবে স্বাচ্ছন্দময়।

আর প্রযুক্তির হাত ধরে ই-কমার্স যেভাবে প্রতিমুহূর্তে জনপ্রিয় হচ্ছে, তাতে নিশ্চিতভাবে বলা যায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার এটিই সঠিক সময়। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে, আগে হোক আর পরে হোক, প্রায় সব ধরণের ব্যবসাই ডিজিটাল রূপ নিচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রসারে আপনার মতো ডিজিটাল মার্কেটারদের সহযোগীতা লাগবেই।

ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং হল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের প্রচারনাকে বোঝায়। বর্তমান যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা এখন ঘরে বসে বিশ্বের সব খবরাখবর রাখতে পারছি, দুর দূরান্তের মানুষের সাথে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে একে অন্যকে দেখতে পারছি।

এই ইন্টারনেট ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে যে ব্যবসায়িক মাধ্যম গড়ে উঠেছে তাকেই মূলত আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং বলি। আরো সহজ ভাবে বলি, আমরা প্রতিনিয়ত ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব ইত্যাদি সাইট ব্যবহার করছি। এই সাইটগুলতে আমার আপনার মত আরো লক্ষ্য লক্ষ্য লোক ব্যবহার করে থাকে। যেহেতু এখানে অনেক অডিয়েন্স আছে সেহেতু এখানে যদি আমরা আমাদের পণ্যের প্রচারণা করতে পারি তাহলে খুব সহজেই আমরা কাস্টমার পেতে পারি। এবং এই অডিয়েন্স এর কাছে নিজের পণ্যের প্রচারণার মাধ্যমকেই আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং বলি।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন?

ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করার আগে অবশ্যই জানা দরকার কেন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন? তবে এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই – আপনি যখন টিভি দেখেন, তখন যেই পণ্যের বিজ্ঞাপন গুলো আপনি দেখেন, তার সব পণ্যই কি আপনি কেনেন বা সেগুলো সব ই কি আপনার জরুরী?

আমার মনে হয় আপনার উত্তর হবে “না”। কারণ যেই বিজ্ঞাপন গুলো দেখানো হচ্ছে, টিভি চ্যানেল জানেনা কে আসলে টিভি টা দেখছে। এখন ধরুন আপনি অবিবাহিত একজন ব্যাক্তি এবং আপনার বাসায় কোন বাচ্চাও নেই, আপনার সামনে যদি বাচ্চাদের ডাইপারের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় তাহলে ওই বিজ্ঞাপন দেখে আপনার কি কোন লাভ আছে, নাকি ওই কোম্পানির কোন লাভ আছে। এখানে ওই কোম্পানির কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা, বিজ্ঞাপন দিতে যেই টাকা খরচ হচ্ছে, তা সবই জলে যাচ্ছে।

অন্যদিকে দেখুন, আপনি ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখছেন কিভাবে বার্গার তৈরি করা যায়, এবং ভিডিও দেখার মাঝেই একটা বিজ্ঞাপন চলে আসলো বার্গার এর জন্য বেস্ট সস কোনটা বা বার্গার তৈরি করার জন্য কোথা থেকে জিনিসপত্র কিনতে পারেন। তাহলে এই বিজ্ঞাপন টা আপানার কাছে কেমন লাগবে এবং এখান থেকে আপনি কি ওই পণ্য কিনতে আগ্রহী হবেন? আমার মনে হয় অবশ্যই আপনি আমার সাথে একমত হবেন এবং অবশ্যই এই বিজ্ঞাপন থেকে ওই কোম্পানির পণ্য বিক্রি হবে। আমার মনে হয় আপনি বুঝতে পেরেছেন আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি। হ্যাঁ, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পণ্যের জন্য টার্গেটেড কাস্টমার খুব সহজে খুঁজে পেতে পারি এবং এখানে খরচও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।

কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবেন?

প্রথমত আপনার পণ্যটি কোন ক্যাটাগরির কাস্টমারের কাছে চাহিদা সম্পূর্ণ তা বিবেচনা করে সে অনুযায়ী সঠিক তথ্য ও আকর্ষণীয় কনটেন্টের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। পণ্যের ধরণ ও চাহিদানুযায়ী আপনাকে কনটেন্ট সাজাতে হবে। এবং এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে সেলস ফানেল তৈরি করা। আমার দেখা মতে বাংলাদেশ এর ৯৫% কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রি করার জন্য সেলস ফানেল তৈরি করেন না এবং যার কারণে তাদের সেলস তুলনামূলক ভাবে অনেক কম হয়। সেলস ফানেল এর মাধ্যমে সেলকে ২-৩ গুন বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব। আপনার সেলস ফানেল তৈরি করার পর চিন্তা করতে হবে কোন ডিজিটাল মাধ্যমকে ব্যবহার করে মার্কেটিং শুরু করবেন এবং সেই ডিজিটাল মাধ্যমটি সম্পর্কে আপনাকে ভাল জ্ঞান রাখতে হবে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কত প্রকার?

লোকাল বিজনেস ক্যম্পেইন বা টিপিক্যাল টাইপ মার্কেটিং এ যেমন অনেকভাবে আমরা বিজ্ঞাপন করতে পারি, ঠিক তেমনি ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক প্রকারের হয়ে থাকে, তবে এই সাতটি মাধ্যম অনেক জনপ্রিয়। এই আর্টিকেলে আমি এই ৭ প্রকার ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

  • কনটেন্ট মার্কেটিং
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  • সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
  • সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • এসএমএস মার্কেটিং
  • ওয়েব এনালাইটিক্স


কনটেন্ট মার্কেটিংঃ

ইংলিশ এ বলা হয় “কন্টেন্ট ইজ কিং”। হ্যাঁ, কথাটা আসলেই সত্য। আমার গত ৮ বছরের বেশি মার্কেটিং অভিজ্ঞতায় আমি বলবো যদি কোন কিছু বিক্রি করতে চান তাহলে কন্টেন্ট তৈরি করুন। কনটেন্ট হলো কোন একটি পণ্য, বিষয় বা বস্ত কে কেন্দ্র করে ব্লগ পোষ্ট, ছবি বা ভিডিও এর মাধ্যমে তার আকর্ষণীয় বর্ণনা করে তা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ করা। বিভিন্ন পণ্যের ডিজিটাল বিজ্ঞাপনকেও কনটেন্ট মার্কেটিং বলা যায়। ব্লগিং এর মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা, অনলাইনে ছবি বা পোস্টারিং অথবা ভিডিও মাধ্যমে পণ্য বা ব্র্যান্ডের প্রচারকে কনটেন্ট মার্কেটিং বলে।


সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনঃ

সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন হচ্ছে একটা অরগানিক ট্রাফিক জেনারেশন ম্যাথড। গুগলে প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন তথ্য খুঁজে থাকি, কোন কিছু লিখে যখন সার্চ করা হয় সেটাকে বলা হয় কিওয়ার্ড, আর এই কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করলে অনেক অনেক রেজাল্ট দেখতে পাই। কিন্তু অনেক রেজাল্ট এর মাঝে প্রথম পেজে যেই ১০টি রেজাল্ট দেখায় আমরা কিন্তু ওই রেজাল্ট গুলোই দেখে থাকি। কেউই আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় পেজে গিয়ে সাইট ভিজিট করিনা। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান বা এসইও মূলত আপনার ওয়েবসাইটি গুগল, ইয়াহু বিং অথবা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনে অনুসন্ধান ফলাফলগুলি পর্যালোচনা করে থাকে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

আপনি যদি সঠিকভাবে আপনার কন্টেন্ট এর এসইও করতে পারেন, তাহলে যখন কোন ভিজিটর তার কাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে গুগল বা অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য সার্চ করবে, আপনার ওয়েবসাইট বা কন্টেন্ট যদি প্রথম দিকে দেখানো হয় তাহলে খুব সহজেই আপনি ফ্রি অডিয়েন্স পাবেন এবং অবশ্যই আপনার বিক্রি বৃদ্ধি পাবে। কারন বর্তমানে মানুষ কোন পণ্য কেনার আগে গুগল থেকে বা সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ দিয়ে আগে বিষয়গুলো নিয়ে রিসার্চ করে দেখে এবং এর পর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এজন্য সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য অন্যতম একটা মাধ্যম।


সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং

উপড়ের ছবিটি দেখুন, আমি যখন সার্চ করেছি “what is search engine marketing”, তখন গুগলে প্রথম যেই ৪ টি রেজাল্ট দেখা যাচ্ছে সেগুলোর পাশে ছোট করে লিখা আছে “Ad” মানে বিজ্ঞাপন। ওই ওয়েবসাইট বা কোম্পানিগুলো গুগলকে টাকা দিয়ে এখানে বিজ্ঞাপন করছে। এবং যখন কেউ তাদের টার্গেটেড কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করছে তখন তাদের কন্টেন্ট গুগল প্রথম দিকে দেখাচ্ছে। আমরা এটাকে পিপিসি ক্যাম্পেইন বলি। এই রকম আর অনেক ভাবেই কন্টেন্ট মার্কেটিং করা যায়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।


সোসাল মিডিয়া মার্কেটিংঃ

সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং বলতে আসলে কি বুঝি? সাধারনভাবে বলতে গেলে আমরা প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর মাধ্যমে সোসাল কমিউনিকেশন এর জন্য যে সাইট গুলো ব্যবহার করে থাকি সেগুলেো হল সোসাল মিডিয়া, আর এ সব মাধ্যমে যদি কোনে প্রোডাক্ট প্রমোট করি তাহলে তা হবে সোসাল মিডিয়া মার্কেটিং।

যেমন, টুইটার, পিন্টারেস্ট, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, ফেইসবুক, রেডিট, টামবলার, লিংকডিন সহ ইত্যাদি সোসাল মিডিয়া সাইট।


বাংলাদেশ এবং গোটা বিশ্ব এখন সোসাল মিডিয়ার উপর অনেকটা নির্ভর হয়ে পরেছে, আর আমরা সকলেই আমাদের নিজেদের লাইফ স্টাইল সোসাল সাইটে শেয়ার করতে পছন্দ করি। এজন্য এই সোসাল মিডিয়া সাইটগুলোতে অনেক বেশি কোলাহল থাকে। মার্কেটার হিসেবে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে, আপনি আপনার প্রোডাক্ট এর সেল অনেক গুনে বাড়িয়ে নিতে পারবেন। এই সোশ্যাল সাইটগুলতে ২ ভাবে কাজ করা যায়।


পেইড মার্কেটিং ম্যাথড→

আপনি চাইলে ফ্রি তে আপনার প্রোডাক্ট নিয়ে সোসাল সাইটে সুন্দর সুন্দর কন্টেন্ট তৈরি করে শেয়ার করার মাধ্যমে ক্রেতা খুঁজে নিতে পারেন। প্রতিটি সোশাল মিডিয়াতে টাকার বিনিময়েও বিজ্ঞাপন করে আপনার পণ্যকে অনেকের সামনে নিয়ে যেতে পারেন।


ইমেইল মার্কেটিংঃ

ডিজিটাল মাধ্যমে সবচেয়ে সহজ এবং দ্রুত উপায়ে আপনার পণ্যর বিজ্ঞাপন ভোক্তাদের কাছে পৌঁছানোর কার্যকারি পদ্ধতি হল ইমেইল মার্কেটিং। আপনি কি বিক্রি করছেন সেটা কোন বিষয় নয়। এক ক্লিকেই আপনার সার্ভিসটি সম্ভাব্য হাজার হাজার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে পারবেন।


→ বেস্ট ইমেইল মার্কেটিং সেবা সমূহের তালিকা→

বিভিন্ন পদ্ধতিতে ইমেইল কালেকশন করে এক আপনার পণ্যটির বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে পারেন মুহূর্তের মাঝে। এতে প্রচুর গ্রাহক পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে বাংলাদেশ এর কথা চিন্তা করলে আমার দেখা মতে এখনো এই মার্কেটিং চ্যানেলটা এতোটা জনপ্রিয় না। কারণ আমরা এখনো ইমেইল ব্যবহারে এতটা যত্নশীল না। এজন্য বাংলাদেশ মার্কেট -এ কাজ করতে চাইলে এই চ্যানেল টা আপনাকে খুব বেশি সাহায্য করবে বলে আমার মনে হয়না। 

তবে এটা জেনে রাখুন, “ইমেইল মার্কেটিং ইজ দা লাইফ ব্লাড অফ ডিজিটাল মার্কেটিং”।

হ্যাঁ, আপনারা যারা ইন্টারন্যাশ্নালী ডিজিটাল মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা সিপিএ মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন তারা জানেন, ইমেইল মার্কেটিংকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ব্লাড (রক্ত) বলা হয়। তার মানে বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিং -এ ইমেইল মার্কেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ।


এসএমএস মার্কেটিংঃ

একটা সময় ছিল যখন মোবাইলের এত প্রচলন ছিল না, কিন্তু আমরা সবাই এখন মোবাইল ব্যবহার করি। আর এই মোবাইল হতে পারে মার্কেটিং এর অনেক সুন্দর একটি মাধ্যম। প্রতিদিনই যখন ঘুম থেকে উঠে মোবাইল কোম্পানি থেকে মেসেজ আসেনি এমন খুব কম দেখেছি আমি। মোবাইল কোম্পানিগুলো মূলত মোবাইল এসএমএস মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন পণ্যের প্রোমোশন করে থাকে এবং এই প্রোমোশনের মাধ্যমকে আমরা বলে থাকি এসএমএস মার্কেটিং। আপনি চাইলেও কোন মিডিয়া পার্টনার এর সাহায্য নিয়ে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন এই মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে করতে পারেন। এটা খুবই কম খরচে করা যায়, আর আপনার যদি সেলস ফানেল সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারেন তাহলে এই মার্কেটিং থেকে অনেক বেশি বিক্রি বাড়ানো সম্ভব।


ওয়েব এনালাইটিক্সঃ

ওয়েব এনালিটিক্স হল আপনার ওয়েব সাইট টি কতজন ভিজিট করছে কোন অঞ্চল থেকে কেমন বয়সীরা ভিজিট করছে তা বিভিন্ন সাইট বা সফটয়্যারের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা। এক কথায় বলা যায় একটি ওয়েব সাইটের ভিজিটর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এনালাইসিস করাকে ওয়েব এনালাইটিক্স বলে আমরা অনেকেই গুগুল ওয়েব এনালাইটিক্স, বিং ওয়েব এনালাইটিক্স এবং ইয়াহু এর ওয়েব এনালাইটিক্স এর সাথে পরিচিত। এগুলো দিয়ে কোন একটি ওয়েব সাইটের ভিজিটরের তথ্য সহ অন্যান্য তথ্য গুলো পাওয়া যায়।


সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিকভাবে কাজে লাগান→

সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির কল্যাণে এখন সারা পৃথিবীতেই পরিচিত অপরিচিত মানুষের সাথে যোগাযোগের বিশাল একটি সুযোগ তৈরী হয়েছে। তাই, আপনি যদি শুধুমাত্র এটিকে সেলফি বা ছবি আপলোড কিংবা সময় কাটানোর একটি মাধ্যম হিসেবে এতোদিন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সেই অভ্যাসকে বিদায় জানাতে হবে এখন। ডিজিটাল মার্কেটিং-এ ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে চাইলে মানুষের সাথে স্মার্টলি যোগাযোগ করা শিখতে হবে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কে মানুষের সাথে সুন্দর যোগাযোগ তৈরী করে, এটিকে কাজে লাগাতে শিখুন।

কিছু সাধারণ স্কিল বা দক্ষতা। ধরুন,আপনি একটি কাপড়ের বিজ্ঞাপণ দিয়ে ক্রেতা আনতে চান, বিক্রি বাড়াতে চান, সেক্ষেত্রে যদি টার্গেট অডিয়েন্স সিলেক্ট করতে না পারেন, বা থ্রি পিসের বিজ্ঞাপণে যদি ছেলেদেরও দিয়ে রাখেন সেটা খুব একটা কার্যকরী হবে না। অর্থাৎ পণ্যের বিজ্ঞাপণ দেওয়ার সময় আপনার বুঝে নিতে হবে এর ক্রেতা কারা, তারপর তাদের টার্গেট করেই বুস্ট বা এডস দিতে হবে। বুস্টের ক্ষেত্রে ‘গেট ম্যাসেজ’ অপশন হলো যেটায় লাইক,কমেন্টের চেয়ে ক্রেতাদের ম্যাসেজ বেশি আসবে।

বর্তমানে এটায় বেশি কার্যকরি বলে আমি মনে করি। আরেকটা আছে ‘পোস্ট ইনগেজমেন্ট’ যেটায় পোস্টে লাইক,কমেন্ট ও বেশী মানুষ দেখবে। পেজের বা পোস্টের বিজ্ঞাপণের রিচ নির্ভর করে সিলেক্ট করা বাজেট ও বিজ্ঞাপণের দিন, অডিয়েন্স বা তাদের বয়স,টার্গেট ইত্যাদি অনুযায়ী। ফেসবুক মার্কেটিং এর মাধ্যমে মাসে ২০,০০০ টাকা থেকে .৩ লক্ষ টাকাও আয় করা সম্ভব! ফেসবুকের ই-লার্নিং সাইট ব্লু-প্রিন্টের মাধ্যমে অনলাইনে ফেসবুক মার্কেটিং কোর্স করে নিতে পারেন।

এখানে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে কোর্স সম্পূর্ণ করে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে অনলাইনেই। পেয়ে যাবেন সার্টিফিকেটও। এছাড়া অনেক ভালো কিছু আইটি কোম্পানি আছে যাদের কাছ থেকেও কোর্সটি শিখে নিতে পারেন। তবে, কাজ শুরুর সময় আপনার দরকার হবে একটি ডুয়েল কারেন্সির অর্থাৎ ডলার দিয়ে পেমেন্ট হয় এমন একটি আন্তর্জাতিক মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড (ডেবিট/ক্রেডিট)। এছাড়া পেপল একাউন্ট দিয়েও ফেসবুকে বিজ্ঞাপণ দিয়ে ইনকাম করতে পারেন।


নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখুন→

বর্তমান সময়ে চারপাশের হালচাল কী, বিশেষ করে প্রযুক্তি বিশ্বে এখন কোন বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে, সে সব সম্পর্কে আপনাকে ভালো ধারণা রাখতে হবে। যেহেতু ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড প্রতিমুহূর্তে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই একে কেন্দ্র করে ক্যারিয়ার গড়তে গেলে নিজেকেও রাখতে হবে আপ-টু-ডেট। একদম আপডেট খবরের জন্য টুইটার এবং বর্তমানের মার্কেটিং ট্রেন্ড এর জন্য লিংকডইন ব্যবহার করতে পারেন।


নিজস্ব ব্র‍্যান্ড তৈরী করুন- এর অর্থ হচ্ছে নিজের পরিচয় অন্যদের সামনে তুলে ধরা। অনেকটা নিজের ঢোল নিজে পেটানোর মতো মনে হলেও এটিই বাস্তবতা। আপনি যদি আপনার দক্ষতা বা যোগ্যতাকে অন্যদের সামনে তুলে ধরতে না পারেন, তাহলে ক্যারিয়ার প্রতিযোগিতায় কখনোই এগিয়ে থাকার সুযোগ পাবেন না।


নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করুন→

যেভাবেই দেখুন না কেন, সকল ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জনের জন্য নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বাস্তব জীবন সকল ক্ষেত্রে মানুষের সাথে মিশে যেতে শিখুন, সুন্দর করে কথা বলা শিখুন। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ক্যারিয়ার বিষয়ক ওয়ার্কশপ, সেমিনার ইত্যাদি হয়, সেগুলোতে অংশ নিন।

নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেলে আপনাতেই দেখবেন নিজেকে আপডেট রাখা বা মেন্টর খুঁজে বের করা বা নিজের ব্র্যান্ডিং করার ব্যাপারগুলো অনেক সহজ হয়ে গেছে।


কোডিং সম্পর্কে অল্প হলেও জ্ঞান রাখুন→

এইচটিএমএল বা ওয়ার্ডপ্রেস সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সহায়তা করবে। এটি আপনাকে আরও একটু সমৃদ্ধ করে তুলবে অন্যান্যদের থেকে। আবারও বলছি, আপনাকে যে একজন ওয়েব ডেভেলপার হতে হবে না, এমনটি নয়। কোন একটি ওয়েবসাইটের অ্যাডমিন প্যানেল কীভাবে কাজ করে কীভাবে ওয়েবসাইটকে আপডেট রাখা যায়, এসব বিষয়ে মোটামুটি ধারণা থাকলেই ক্লায়েন্টের সামনে নিজের যোগ্যতাকে আরও একটু ফুটিয়ে তুলতে পারবেন।

আগে বা পরে আমাদের চারপাশের সব ব্যবসা-বাণিজ্যই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়বে। সেকারণে ডিজিটাল মার্কেটিং ক্ষেত্রে কর্মীর চাহিদা অদূর ভবিষ্যতে কমার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আজ থেকেই নিজেকে প্রস্তুত করা শুরু করে দিন।


আরও নতুন পোষ্ট পরবর্তী পোষ্ট